পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় সীমানা: যেখানে মানুষের প্রবেশ নিষেধ


রহস্যময় অদৃশ্য প্রাচীর: যেখানে প্রাণীরাও হার মানে


ভূমিকা

আপনি কি জানেন পৃথিবীতে এমন একটা জায়গা রয়েছে যেখানে একটা অদৃশ্য প্রাচীর রয়েছে বলতে পারেন ইনভিজিবল ওয়াল যা কোন প্রাণী পাখি বা মাছ অতিক্রম করতে পারে না অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে তাই না কিন্তু বিশ্বাস করুন এটাই সত্য হ্যাঁ আজ আপনাদের নিয়ে যাব এমন এক রহস্যময় দ্বীপে যেখানে আছে এই অদৃশ্য সীমানা প্রাচীর যাকে আমরা ইনভিজিবল লাইন বলছি প্রকৃতি নিজেই এই রহস্যময় প্রাচীর তৈরি করেছে এই সীমানা ইন্দোনেশিয়ার বালি এবং লম্বক দ্বীপগুলোর মাঝে এই লাইন একে অপরের পাশ দিয়ে চলে গেলেও এই দুই অঞ্চলের প্রাণীদের জন্য এই সীমানা কখনোই পেরনো সম্ভব না। শুধুমাত্র 35 কিলোমিটার এর দূরত্ব। তারপরেও এই দুই অঞ্চলের প্রাণী একপাশ থেকে অন্যপাশে যেতে পারে না। হ্যাঁ, এখানে এক অদৃশ্য শক্তি আছে যা কোন প্রাণীকে এখানে আসতে বা চলে যেতে দেয় না। অর্থাৎ এই অদৃশ্য প্রাচীর অতিক্রম করতে দেয় না। কিভাবে বুঝিয়ে বলছি। বালি এবং লম্বক দ্বীপগুলোর মাঝে একদিকে রয়েছে এক ধরনের প্রাণী, পাখি এবং মাছ। আর অন্যদিকে একেবারে ভিন্ন ধরনের প্রাণী পাখি এবং মাছ রয়েছে। 




বালি থেকে লম্বক: হঠাৎ বদলে যাওয়া জগৎ

আপনি যখন বালি থেকে লম্বক পৌঁছাবেন তখন আপনি বুঝতে পারবেন যে যতটুকু ঘুরে দেখেছেন সবকিছুই মুহূর্তের মধ্যে বদলে গেছে। হ্যাঁ, যদি বালি থেকে লম্বক চলে যান, আপনি পুরো পরিবেশটাকেই আলাদা হয়ে যেতে দেখবেন। এবং এই রহস্যময় সীমানাটা সবথেকে অদ্ভুত বিষয় হলো এটা শুধু মানুষ ছাড়া অন্য কোন প্রাণী বা মাছের পক্ষে পার করা সম্ভব না। এমনকি একটা পাখিও উড়ে যেতে পারে না। আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন এই 35 কিলোমিটার দূরে এমন কি আছে যে প্রাণীরা একদিক থেকে আরেক দিকে যেতে পারে না সত্যি বলতে এই সীমানার পেছনে রয়েছে এক অদৃশ্য শক্তি যা সবার অগোচরে পুরো পরিবেশকে একে অপরের থেকে আলাদা করে রেখেছে আর এই অদৃশ্য প্রাচীরের রহস্য জানতে হলে আমাদেরকে 150 বছর পেছনে যেতে হবে কিভাবে এবং কেন এটা তৈরি হলো আর কেনইবা এটা সম্ভব চলুন একটু অতীতে ফিরে যাই 150 বছর আগে এক ব্রিটিশ গবেষক আলফ্রেড রসেল ওয়ালিস এই রহস্যময় লাইনটা আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি জানতেন না যে তার এই আবিষ্কার একদিন পুরো পৃথিবীকে চমকে দিবে। আসলে ওয়ালিসের জীবনটাও ছিল অত্যন্ত নাটকীয়। ইংল্যান্ডের একটা সাধারণ পরিবারে

আলফ্রেড রসেল ওয়ালিস: জীবনের বাঁক

জন্ম নেয়া আলফ্রেড ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় আগ্রহী ছিলেন। তবে পরিবারের অভাব অনটন তাকে পড়াশোনা ছেড়ে তার বাবার সাথে যিনি ছিলেন একজন কার্টোগ্রাফার অর্থাৎ মানচিত্রবিদ। তার সাথে যাত্রা করতে বাধ্য করেছিল। কিন্তু এই সিদ্ধান্তই ছিল তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের পৃথিবীর জন্যও বটে। তিনি বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করা শুরু করেন যেখানে তিনি প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত হন এবং নানা ধরনের উদ্ভিদ প্রাণী এবং পোকামাকর সংগ্রহ করতে থাকেন এভাবেই তিনি 1854 সালে একদিন নৌকা নিয়ে 35 কিলোমিটার দূরে লম্বক দ্বীপে চলে যান আর সেখানে পৌঁছানোর পরে তিনি প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করেন কিছু একটা অস্বাভাবিক ঘটছে এখানে তিনি এমন সব প্রাণী দেখেন যেগুলো তিনি আগে কখনো দেখেননি কোমোডো ড্রাগন ক্যাঙ্গারু কোয়ালা এমন সব অদ্ভুত প্রাণী এসব প্রাণী গুলো কোথা থেকে এসেছে? কেন তারা বালি বা অন্যান্য দ্বীপে নেই? কোয়ালিস আর তার সঙ্গীরা বেশ অবাক হয়ে যান। এখানে তার কাছে এক বড় প্রশ্ন এসে দাঁড়ায়। কেন এই দ্বীপে এত বিচিত্র প্রাণী বসবাস করে? কিছু একটা শক্তি কাজ করছে এটা সে বুঝতে পারছিল। তবে এই রহস্যময় পরিস্থিতি তাকে ভাবিয়ে তোলে। কিন্তু সমাধানটা আসতে আরো কিছুদিন সময় লাগে। এবং সেই সময়ের মধ্যে তাকে এমন এক অদ্ভুত রোগে আক্রান্ত হতে হয় যা তাকে এক জায়গায় বিশ্রাম নিতে বাধ্য করে। আর সেই বিশ্রামের সময় এই রহস্যময় লাইন সম্পর্কে তার মস্তিষ্কে প্রথম একটা অসাধারণ ধারণা আসে এবং এই ভাবনাই ছিল তাকে পৃথিবী জুড়ে অবিস্মরণীয় করে তোলার পথে প্রথম পদক্ষেপ। অলিশ যখন তার বিশ্রামে ছিলেন তখন তার মনে অদ্ভুত চিন্তা আসলো। তিনি বুঝতে পারলেন এখানে যা ঘটছে তা কোন সাধারণ বিষয় না। বালি এবং লম্বকদ্বীপের প্রাণী, পাখি এবং মাছের মধ্যে যে বৈচিত্র আছে তা কোন সাধারণ বিষয় না। কিছু একটা বড় অদৃশ্য শক্তি তাদেরকে পৃথক করে রেখেছে। তবে কি সেই শক্তি? ওয়ালিসের মনে তোলপাল শুরু হলো। তিনটা প্রশ্ন তার মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল। প্রথমত কেন এই দুইটা দ্বীপের প্রাণী একে অপরের সাথে মেলামেশা করে না? দ্বিতীয়ত কেন পাখিরাও এই অদৃশ্য সীমা পার করতে পারে না এবং তৃতীয়ত দুই পাশের মাছেরা কেন এত আলাদা? একটা সময় ওয়ালিস মনে করলেন কিছু একটা রহস্যময় ব্যাপার ঘটছে এবং তিনি তার পর্যবেক্ষণ দিয়ে একটা তত্ত্ব তৈরি করলেন। ওয়ালিস বললেন, বালি এবং লম্বকদ্বীপ একসময় একে অপরের সঙ্গে যুক্ত ছিল।


ওয়ালিসের তত্ত্ব: দ্বীপগুলো একসময় যুক্ত ছিল

 বহু আগে যখন পৃথিবী একেবারে আলাদা ছিল, তখন এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ একসাথে ছিল। কিন্তু যখন পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং সমুদ্রের পানি বৃদ্ধি পায় তখন এই দুটো মহাদেশ আলাদা হয়ে যেতে থাকে এবং আলাদা হয়ে যায়। ওয়ালিসের থিওরি অনুযায়ী যে প্রাণীরা বালিদ্বীপে বসবাস করে তারা মূলত এশিয়ার প্রাণী। যেমন হাতি, বাঘ এবং আরো অনেক প্রজাতির প্রাণী। আর যারা লম্বক দ্বীপে থাকে তারা অস্ট্রেলিয়ার প্রাণী। যেমন ক্যাঙ্গারু, কোয়ালা এবং কোমোডো ড্রাগন। আর এই প্রাণীগুলো একে অপরের সঙ্গে মিশতে পারে না। কারণ তারা লাখ লাখ বছর আগেই আলাদা হয়ে গেছে। যখন পৃথিবী থেকে এক মহাদেশ ভেঙে নতুন দ্বীপ এবং সমুদ্র তৈরি হয়েছিল। এই তত্ত্বটা সেই সময়ে শুধু প্রাণীদের বৈচিত্রই ব্যাখ্যা করে না। বরং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকেও পৃথিবী সম্পর্কে আমাদের ধারণা বদলে দেয়। যদিও সেই সময়ের বহু বছর পরে আমরা এখন বিজ্ঞানের কল্যাণে জানতে পেরেছি যে আমাদের পৃথিবী কখনোই একরকম ছিল না। এটা একটা চলমান প্লানেট। যেখানে মহাদেশগুলোর প্লেট টেকটনিক্স এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। আর এটা এখনো চলমান। তবে ওয়ালিসের কাজ ছিল আরো এক ধাপে গিয়ে। 




আধুনিক বিজ্ঞান ও পরিবেশগত ভিন্নতা

তিনি প্রমাণ করেছিলেন শুধু প্রাণীরা না পুরো পরিবেশটাই আলাদা হয়ে গেছে সমুদ্রের পানি বায়ু মাটি সবই বদলে গেছে আর এই বদলটা কোন মানুষের চোখে ধরা পড়ে না তবে প্রকৃতি পরিবেশ এবং প্রাণী নিয়ে যারা গবেষণা করেন তারা যেন এই অদৃশ্য প্রাচীরটা হাত দিয়ে স্পর্শ করতে পারেন আর ওয়ালিসের এই অনুধাবনটা ছিল এক যুগান্তকারী আবিষ্কার তার এই থিওরিটা এতটাই গভীর ছিল যে এই রহস্যময় পৃথিবীকে সেটা বুঝতে আমাদেরকে সবকিছু নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছিল আসলেই ভেবে দেখুন মাত্র 35 কিলোমিটার ব্যবধানে কি এমন আছে যা দুইপাশের পশুপাখি মাছ এবং পাখি পর্যন্ত এপার ওপার করতে পারে না।


Post a Comment

0 Comments